নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর কবাই ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক নাসির তালুকদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, নাসির তালুকদারের কার্যক্রম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি’র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান বিএনপির আহবায় কমিটির সভাপতি নাসির তালুকদার আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক তালুকদারের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরে আসেন এবং আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়। নাসির তালুকদারের ছত্রছায়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আবার সংগঠিত হয়ে উঠছেন।

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ফ্যসিষ্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নীরব ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কবাই ইউনিয়নের পরিস্থিতি ছিল ব্যতিক্রম।
শিয়ালগুলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের বিএনপি নেতা নাসির তালুকদারের ও ৭ং কবাই ইউনিয়নের আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক সভাপতি নিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দেন মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন ।

এই ঘটনায় কবাই ইউনিয়নসহ বাকেরগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, নাসির তালুকদারের এমন কর্মকাণ্ড দলের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্থানীয় একাধিক নেতার ভাষ্যমতে, নাসির তালুকদার আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন সদস্য। তার ভাই, আত্মীয়-স্বজনসহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, নাসির তালুকদারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, নাসির তালুকদারের ছোট ভাই হিরন তালুকদার ছিলেন কবাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তার বড় ভাই এনামুল হক মতি আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা এবং সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। অন্যদিকে, নাসির তালুকদারের আপন ছোট বোনের জামাই বাসার শিকদার ৫ নম্বর দুর্গাপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।

জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান ৫ নম্বর দুর্গাপাশা ইউনিয়নে নির্বাচনীয় প্রচারণা চালাতে পারেননি। এমনকি বিএনপির কোনো কার্যক্রম ১৬ বছরেও সেখানে চালানো সম্ভব হয়নি।

নাসির তালুকদারের অতীতও বিতর্কিত। একসময় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। চাকরিরত অবস্থায় আসামি ধরে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। এরপর তিনি কবাই ইউনিয়নে এসে রাজনীতি শুরু করেন। বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলের আহ্বায়ক পদে আসীন হলেও তার কার্যক্রমে বারবার প্রশ্ন উঠেছে।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, নাসির তালুকদার আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুজাম্মেল হক তালুকদার নাসির তালুকদারকে নিজের জমিতে আওয়ামী লীগ পূর্ণ গঠনের শর্তে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এই অভিযোগ সম্পর্কে নাসির তালুকদারের সাথে ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভাব হয়নি।

বরিশাল বাকেরগঞ্জের বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং বরিশাল দক্ষিণ আহবায়ক কমিটির সভাপতি ও সাবেক এমপি জননেতা আবুল হোসেন বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি । ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। যদি কোনো নেতাকর্মী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও নাসির তালুকদারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দ্রুত শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের এই অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি বিএনপির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে নাসির তালুকদার।